সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দরপত্র জালিয়াতির ভূত সিপিটিউকে পর্যন্ত আক্রান্ত করেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যদিও সওজ’র অব্যাহত দরপত্র জালিয়াতি বন্ধে সিপিটিইউ’র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ই-জিপির মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিল। এই ইজিপি বা ই-টেন্ডার প্রবর্তনের ফলে সওজ’র পূঞ্জীভূত দুর্নীতি অনেকটা হ্রাস পেয়েছিল এবং দরপত্র জালিয়াতি সংক্রান্তে সওজ’র বদনাম প্রায়ই মোচন হয়েছিল কিন্তু সম্প্রতি সওজ’র দরপত্র জালিয়াতরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
সওজ’র অধিকাংশ ঠিকাদার এই দরপত্র জালিয়াতির খবর জানলেও সওজ প্রশাসন কিংবা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের শীর্ষ কর্তাদের কর্ণকুহরে এই বার্তা পৌছেনি। বিষয়টি ব্যাপক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়িতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের প্রায় সকলেই এই দরপত্র ঘাপলার খবর জানেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেই সব কিছু জানা যাবে। সিপিটিউ’র মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা থাকার পরেও সওজ’র চিহ্নিত প্রকৌশলী কোন্ তরীকায় দরপত্র জালিয়াতি করেছেন তা সওজ সেক্টরের সকলকেই বিস্মিত ও হতবাক করেছে।
এদিকে, সওজ’র দরপত্র নিম্পন্নকালে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এ্যাক্ট, ২০০৬ অনুযায়ী ঠিকাদারদের কারিগরী ও আর্থিক যোগ্যতা যাচাই করার ক্ষেত্রে চরম শৈথিল্য রয়েছে। এতে করে কারিগরী ও আর্থিকভাবে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও পরবর্তীতে তারা কাজ শেষ করতে পারছে না। ঢাকা-চট্রগ্রাম ফোর লেন এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোর লেন প্রকল্পে দুইটি চীনা কোম্পানীসহ বেশ কয়েকটি দেশীয় কোম্পানী কারিগরী ও আর্থিকভাবে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কাজ পেয়ে পরবর্তীতে নানা জটিলতার সৃষ্টি করেছে। এতে করে একদিকে সরকার সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে অন্যদিকে এই প্রকল্পগুলো জনভোগান্তি বৃদ্ধি করেছে। সিপিটিউ’র মতে, রেসপন্সিভ ঠিকাদারের কাজ সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় কারিগরী এবং আর্থিক যোগ্যতা আছে কিনা দরপত্র নিস্পন্নকালে তা যাচাই করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সওজ’র অনেক জোন, সার্কেল ও ডিভিশনে ঠিকাদারের যোগ্যতা আছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে না। সওজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেই দরপত্র নিস্পন্নকালে এই নীতি অনসৃত না হওয়ায় সম্প্রতি সিপিটিইউ বাধ্য হয়েই একটি পরিপত্র জারী করেছে। উক্ত জারীকৃত পরিপত্রে বলা হয়েছে, পিপিএ, ২০০৬-এর ৪৮ ধারার অধীন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে ধারা ৫০ অনুযায়ী দরপত্র দলিলে উল্লিখিত দরপত্র দাখিলের পর রেসপন্সিভ দরপত্রদাতার কার্যকরভাবে চুক্তি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও আর্থিক সামর্থ্য আছে কি না তা যাচাই করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, এই বিধান অনুসরণ করা হচ্ছে না। এতে আরো বলা হয়, পিপিআর, ২০০৮ এর ১০০(১) ধারা মতে, দরপত্র দলিলে উল্লিখিত নির্ণায়ক অনুসরণক্রমে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দরপত্র দাখিলোত্তর যোগ্যতা যাচাই করবে। ধারা-২ মতে, মূল্যায়ন কমিটি প্রয়োজনে দরপত্রদাতা কর্তৃক দরপত্র দলিলে প্রদত্ত ক্রয় কার্যাদি সম্পাদন সম্পর্কিত তার অতীত অভিজ্ঞতার বিবরণ যাচাই করার জন্য এবং সংশ্লিষ্ট দরদাতা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্যাদি সংগ্রহকল্পে সূত্রের সাথে যোগাযোগ করবে। ধারা-৩ মতে, যাচাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাস্তবানুগ ও যথাযথ বলে বিবেচিত হলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বিশেষভাবে উচ্চমূল্য বা জটিল কার্যের দরপত্র মূল্যায়নের সময় টেন্ডার দলিলে বর্ণিত তথ্যের সঠিকতা যাচাই করার জন্য দরদাতার কার্যালয় বা ভবন পরিদর্শন করতে পারবে। ৪-এর উপবিধি-৩ মতে, পরিদর্শনে সাধারণভাবে দরপত্রদাতার যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা সংক্রান্ত বিদ্যমান সুযোগসুবিধা প্রত্যক্ষ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। পরিদর্শনের সময় দরপত্রদাতার সাথে দরপত্রের কোনো বিষয়ে ও তার মূল্যায়ন সম্পর্কে কোনো আলোচনা করা যাবে না। ৫ ধারা অনুযায়ী দরপত্রদাতা নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে দরপত্রে মূল্যায়িত দরপত্রদাতা সম্পর্কে এবং তা ফলপ্রসূ না হলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য গ্রহণযোগ্য দরতাদাদের যোগ্যতা অনুরূপভাবে নির্ধারণ করবে। ৭ অনুযায়ী, আগে প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে থাকলেও প্রাক-যোগ্য দরপত্রদাতার আগে যাচাইকৃত যোগ্যতা ও আর্থিক সামর্থ্য এখনো বিদ্যমান আছে কি না তা নিরূপণ করাই দরপত্র দাখিলোত্তর যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্য হবে। গণ খাতে ক্রয়ের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের আওতায় দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পিপিএ, ২০০৬ এর ৫০ ধারা এবং পিপিআর, ২০০৮ এর ১০০ বিধি অনুসরণে দরপত্র দলিলের ইন্সট্রাকশন অব টেন্ডারার্সে বর্ণিত নিয়ম ও শর্তানুযায়ী দরপত্র দাখিলোত্তর যোগ্যতা যাচাই করে সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য ঠিকাদার নির্ধারণ নিশ্চিত করার জন্য সিপিটিইউর পরিপত্রে সব ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। অপরদিকে, একই ব্যাপারে আইএমইডি জানিয়েছে, ক্রয়প্রক্রিয়াতে অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে পিপিএ ও পিপিআর যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবেও সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এখন এটার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সিপিটিইউর পক্ষ থেকে পরিপত্র জারির মাধ্যমে আইন ও বিধিগুলো উল্লেখ করার জন্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক সময় বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে পিপিএ ও পিপিআর অনুসরণ না করার কারণে উন্নয়নসহযোগীদের পক্ষ থেকেও অর্থছাড়ে বিলম্বিত হয়েছে। ক্রয় কাজে সঠিকভাবে আইন পরিপালন না করার কারণে অনিয়মও হচ্ছে।
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ই-জিপি বা ই-টেন্ডারের প্রচলন সবচেয়ে বেশী। ব্যতিক্রম বাদে শতভাগ দরপত্রই ই-জিপির আওতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সওজ’র ভাবমূর্তি খানিকটা হলেও উজ্জ্বল হয়েছে কিন্তু সম্প্রতি দরপত্র জালিয়াতির যে গুঞ্জন সড়ক ভবনে শোনা যাচ্ছে তাতে এই ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের আশংকা দেখা দিয়েছে। সওজ’র অন্য একটি সূত্রের মতে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ই-টেন্ডার প্রকাশ ও প্রচারে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী সব কিছুতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। সওজ’র নির্দিষ্ট ফরম্যাটকে উপেক্ষা করতঃ নিজেদের মনগড়া পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ঠিকাদার ও গণমাধ্যম কর্মীদের বিপাকে ফেলছে। অথচ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এমআইএস এন্ড এস্টেট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ ফরিদুল আলম ই-জিপি বাস্তবায়ন ও টেন্ডার প্রকাশনা সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক আগেই এক পত্র প্রেরণ করেছেন। বিগত ২১/০১/১৪ ইং তারিখে প্রেরিত উক্ত পত্রের স্মারক নং-১০/এমআইএস। পত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে সওজ অধিদপ্তরে ই-জিপি এর মাধ্যমে আহবানকৃত দরপত্রসমূহ অনিয়মিতভাবে কখনও দৈনিক পত্রিকা, কখনও সওজ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে। যার ফলে সওজ’র কাজ প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কাজের গ্রহনযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ই-জিপি এর মাধ্যমে আহবানকৃত সকল দরপত্রই নিজ নিজ দপ্তরের উদ্যোগে নির্দিষ্ট ফরম্যাট এ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, সিপিটিইউ (www.cptu.gov.bd) ও সওজ এর ওয়েব সাইটে (www.rhd.gov.bd) পূর্বের ন্যায় প্রকাশ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”
দেখা গেছে, ই-জিপি বাস্তবায়নের জন্যে যোগাযোগ মন্ত্রনালয় এবং সওজ জোর নির্দেশনা জারীর পর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীগন ই-জিপি ও সওজ’র ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলেও কখনো কখনো কোন্ কোন্ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করা হয়েছে তা উল্লেখ করেননি। আবার কোন কোন বিজ্ঞাপনে যে সমস্ত পত্রিকায় দরপত্র প্রকাশিত হয়েছে বা হবে সেই ‘টেন্ডার পাবলিশিং নিউজপেপারস’ নামের কলামটিকেই উধাও করে দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ পত্রিকার নামের পরিবর্তে ওয়েবসাইটের নাম ব্যবহার করেছেন। দরপত্র বিক্রয়ের কার্যালয়সমূহ কলামে অনেকেই দরপত্রের প্রাপ্তিস্থান হিসেবে সওজ সংশ্লিষ্ট কার্যালয়সমূহের নাম উল্লেখ করলেও কেউ কেউ লিখেছেন ‘সমগ্র বাংলাদেশ’।
অভিজ্ঞমহলের মতে, সওজ’র ই-জিপি বা ই-টেন্ডার প্রকাশে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট ফরম্যাট যথাযথভাবে প্রতিপালন করা উচিত। তা না হলে নির্বাহী প্রকৌশলী বা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীগন নিজস্ব মনগড়া ধ্যান-ধারণার আশ্রয় নিয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারেন। এই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাতে দুর্নীতি আবার ঝেকে বসতে পারে। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি, দরপত্র জালিয়াতি এবং অনিয়মকে বিদায় জানানোর লক্ষ্যেই ই-টেন্ডার বা ই-জিপি প্রবর্তন করা হয়েছে।
এদিকে, বিগত ২/৩/১৪ইং তারিখে সওজ’র তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম রাজ খান স্মারক নং-১০৫০, প্রঃ প্রঃ মোতাবেক ই-জিপিতে দরপত্র আহবান প্রসঙ্গে এক পত্র জারী করে স্পষ্ট করেছেন যে, “এখন হতে কোন দরপত্র ই-জিপি ব্যতিত অন্য কোন পদ্ধতিতে আহবান করা যাবে না। উক্ত স্মারকের দরপত্রে বলা হয়, “বিশ্বব্যাংকের PPRP-IIAF প্রকল্পের কার্যক্রম গতিশীল করতঃ নির্ধারিত ই-জিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এর জন্য ১লা জানুয়ারী ২০১৪ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন সকল সড়ক বিভাগ, সড়ক সার্কেল ও জোন এর দরপত্র ই-জিপি এর মাধ্যমে করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় উক্ত নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হয় তাহা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হল। উল্লেখ্য এখন হতে কোন দরপত্র ই-জিপি ব্যতিত অন্য কোন পদ্ধতিতে আহবান করা হলে তার দায় দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বহন করতে হবে।”
এদিকে, সওজ’র যান্ত্রিক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হকের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে সওজ প্রশাসন বা মন্ত্রনালয় কোন ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। উক্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় অবশেষে তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির নজরে আনা হয়। সংসদীয় কমিটির নিকট আনীত অভিযোগে বলা হয়েছে। “নিয়মানুযায়ী উচ্চপদের কোনো কর্মকর্তা নিচের পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন কররেত না পারলেও সওজে’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হক নিচের তত্ত্বাবধাায়ক প্রকৌশলীর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অধীনে চারটি ডিভিশন আছে। যেখান থেকে এষ্টিমেট পাস করে সুবিধা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বছরে চারটি ডিভিশনে প্রায় ১০ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকার কাজ হয়। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নিজেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় নির্দিষ্ট কমিশনে এষ্টিমেটগুলো পাস করিয়ে দেন। এছাড়া বিভিন্ন ডিভিশনের যন্ত্রাংশ ভাড়া দিয়েও ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন জাফর, তোফাজ্জাল ও রহমান নামের তিন ঠিকাদার। তাদের পরামর্শে এক মাস আগে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ষ্টোর ডিভিশন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগে কিছু আইটেমের রেট বা দাম বাড়িয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বেশি কমিশন নিয়েছেন। এতে সরকারি বিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ওই কর্মকর্তা অক্টোবরে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্য করছেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকার সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ বিভাগের এষ্টিমেটর হাফিজুর রহমানকে বরিশাল ফেরি সার্কেলে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, গাড়ি মেরামতের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করছেন সওজ অধিদফতরের ঢাকা কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সংস্থার তেজগাঁও কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভুয়া বিল ও ভাউচারের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এ দফতরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই তার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের নামে প্রায় কোটি টাকার ভুয়া বিল উত্তোলন করেন। এই প্রকৌশলী তার বাড়ির কেয়ারটেকার আব্দুল কাদের মাসুদের নামে মেসার্স তেপান্তর এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স কাদের এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিগত অর্থবছরে নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ থেকে কাজের চাহিদাপত্র ছাড়াই ভুয়া চাহিদাপত্র তৈরি করে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ও যান মেরামতের অনুকূলে সড়ক বিভাগ থেকে বিল তুলেছেন। এছাড়া ঢাকা কারখানা বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী হেদায়েতুল বারিও ১০ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে কাজ করেন।”
উপরোক্ত অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর ও স্পর্শকাতর। অভিযোগগুলো পুরোপুরি সত্য হলে আলোচিত প্রকৌশলীদের কারাগারে থাকার কথা কিন্তু তারা এখনো বহাল তবিয়তেই আছে। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? কোন্ খুঁটির জোরে আলোচিত প্রকৌশলীরা কথিত দুর্নীতি ও অনিয়ম করলেন?
পুনশ্চঃ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের (সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রনালয়) বর্তমান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যোগদানের পরেই সওজ’র ভাবমূর্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়েছে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার দুর্নীতি ও অনিয়মের ভূত মাথাচাড়া দিয়েছে। এই ভূত নিয়ন্ত্রনে সিপিটিইউ সরিষার ভূমিকা পালন করে চলছে। বর্তমানে সেই সরিষায় ভূত ঢুকে যাওয়ার যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তা কতোটা সঠিক তা অবিলম্বে তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। চিলে কাণ নিয়েছে একথা শুনে চিলের পেছনে দৌড়ানো যেমন চালাক মানুষের কাজ নয় তেমনি বাঘ এসেছে শুনেও চুপ করে বসে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং উভয় ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানই সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।