♦ কাজ না হলেও টাকা তোলা হয়েছে
♦ ঠিকাদার ও পিআইসি বাস্তবায়ন করেছে
আমাদের প্রকৌশল ডেস্ক
কলারোয়ায় কাজ না করে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৪০ প্রকল্পে বরাদ্দের টাকা তোলা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর, ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে কাজগুলো বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র ডাকা হয়। ৭০ লাখ টাকার কাজ পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়া হয়। পিআইসি ও দরপত্রের শর্তানুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।
দক্ষিণ সোনাবাড়িয়া ডিপের ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দ ৭০ হাজার টাকা, প্রভাতী সংঘ মেরামত ও ফার্নিচার সরবরাহে বরাদ্দ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, মাস্টারপাড়া জামে মসজিদ সংস্কার এক লাখ টাকা, আলাউদ্দীনের বাড়ির সামনে সিসি ঢালাই ও সিদ্ধেশ্বরের বাড়ির সামনে ব্রিক সোলিংয়ে বরাদ্দ এক লাখ টাকা এবং ওমর ইবনে খাত্তাব হাফেজি মাদরাসার নামে বরাদ্দ এক লাখ টাকা। কাজ না করে এসব টাকা তোলা হয়েছে। রামকৃষ্ণপুর দুর্গামন্দির সংস্কারে বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা, রামকৃষ্ণপুর দীপকের বাড়ি থেকে কানাইয়ের বাড়ির রাস্তা ব্রিক সোলিংয়ে বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা এবং বড়ালী মডেল মাদরাসায় (বাস্তবে টিনের ঘর) ছাদ নির্মাণ করার কথা বলে বরাদ্দ দুই লাখ টাকা তোলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কম্পিউটার কাম সাঁটমুদ্রাক্ষরিকের বাড়ি এখানে হওয়ায় তিনি নামে-বেনামে কয়েকটি প্রকল্প নেন।
স্থানীয়রা জানায়, কেরালকাতা ইউনিয়নে কাজ না করে কাউরিয়া মোকছেদ আলীর বাড়ি থেকে আশরাফ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দ এক লাখ টাকা এবং কোমরপুর এতিমখানা ও হাফেজি মাদরাসা সংস্কারে বরাদ্দ এক লাখ টাকা তোলা হয়েছে। আনুমানিক ৫০ ফুট সংস্কার করে কাউরিয়া রউফ মাস্টারের বাড়ি থেকে আবু বকরের বাড়ি হয়ে নাকিলা পিচ রাস্তা অভিমুখে ব্রিক সোলিং সংস্কারে বরাদ্দ দুই লাখ টাকা এবং পুটুনি গ্রামে ঈদগাহ সংস্কারে এক লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কাজ না করে পুরনো টিনশেডের চন্দনপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ছাদ নির্মাণ করার তথ্য দিয়ে বরাদ্দ দুই লাখ টাকা, তিন বটতলা মসজিদ সংস্কার/টয়লেট নির্মাণে বরাদ্দ ৮৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। গোয়ালপাড়া বটতলা থেকে সাত্তারের বাড়ি ব্রিক সোলিংয়ে যথাক্রমে এক লাখ ৫০ হাজার ও ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে দুটি প্রকল্পের একটির কাজ করে অন্যটি আত্মসাৎ করা হয়েছে।
কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে আট বছর আগের প্যালাসাইডিং দেখিয়ে বাকসা আজাদ মাস্টারের বাড়ির পাশে পুকুরের পার পাইলিংয়ের বরাদ্দ ৮০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কাজে হাত না দিয়ে গোয়ালচাতর বাজারে দুটি ফিল্টার ক্রয়ে বরাদ্দ ৬০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। একই ইউনিয়নে বালিয়াডাঙ্গা বাজারে সোবহানের দোকান থেকে রানা মেম্বারের দোকান পর্যন্ত সদ্যোনির্মিত কার্পেটিং রাস্তায় খোয়া ও বালি দ্বারা সংস্কার এবং কালভার্টের স্লাব নির্মাণে বরাদ্দ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এদিকে লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নে তিন বছর আগে রাস্তা কার্পেটিংয়ের সময় খাসপুর সুফলের দোকানের পাশে নির্মিত বক্স কালভার্টের নামে সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে আবার ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে তা তুলে নেওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নে কাজ না করে লোহাকুড়া ঘোষের পুকুর থেকে মিয়ারাজ সরদারের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫ হাজার টাকা এবং ভিন্ন নামে কাবিটা প্রকল্পে দুই লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আর এই রাস্তা ভিন্ন নামে এলজিএসপি প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকায় ব্রিক সোলিং করা হয়েছে। কাজ না করে লাঙ্গলঝাড়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই ও আসবাব সরবরাহে বরাদ্দ দুই লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। গৃহহীনের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়ার আগে ভাদিয়ালীতে নির্মিত মুজিববর্ষের ঘর পুনর্নির্মাণ/সংস্কারে দুই দফায় বরাদ্দ চার লাখ টাকার কোনো কাজ না হওয়ার ঘটনা একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে ধরা পড়েছে।
দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আলমগীর কবীরের ডিপের ইউড্রেন নির্মাণে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ডিপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একই ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গাজী পাড়া মসজিদ সংস্কারে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং দলুইপুর গাজী পাড়া মসজিদ সংস্কারে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে নিলেও মসজিদের সভাপতি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। উত্তর দেয়াড়া ইসলামের বাড়ি থেকে ঈদগাহ মুখের রাস্তাটি টিআর বরাদ্দে হলেও প্রকল্প দেখিয়ে এক লাখ টাকা তোলা হয়েছে। যুগিখালী ইউনিয়নের বেশির ভাগ প্রকল্পে অন্য প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
মানিকনগরে রাস্তায় দুই লাখ টাকা টিআরের বরাদ্দ থাকলেও এই প্রকল্প থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। হামিদপুর আরঅ্যান্ডএইচ বামনখালী সড়কে পাঁচনল পুকুরের পাশে অন্য প্রকল্পের কালভার্ট নির্মাণ দেখিয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।
কয়লা ইউনিয়নে আলাইপুরের রাস্তার ৬০ হাজার টাকা, কুমারনল গ্রামে মসজিদ সংস্কারের এক লাখ ২০ হাজার টাকা, শ্রীপতিপুর ধাবকপাড়া ঈদগাঁ সংস্কারে ৮০ হাজার টাকা এবং কয়লা বাজারে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণে ৬০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
হেলাতলায় ৬০ হাজার টাকা এবং হেলাতলা বাজারের এক লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কারকাজে টিআর বরাদ্দের এক লাখ ৪৫ হাজার টাকার কাজ এই বরাদ্দে দেখিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা লোপাট করা হয়েছে। এদিকে কলারোয়া উপজেলা প্রকৌশলী সুদীপ্ত কুমার বলেন, ‘কিছু কাজ হয়েছে। আর যে কাজ বাকি আছে, তা নতুন ইট বের হলে করে দেবেন বলে ঠিকাদাররা আমাকে জানিয়েছেন, অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেব। ’